Logo

হিন্দু আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের নিয়ম

হিন্দু আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের নিয়ম

হিন্দু আইনে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে:

(ক) মিতক্ষরা পদ্ধতি

(খ) দায়ভাগ পদ্ধতি।
বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ আইন অনুযায়ী, যারা মৃত ব্যক্তির আত্মার কল্যানের জন্য পিণ্ডদানের অধিকারী, কেবলমাত্র তারাই মৃত ব্যক্তির সপিণ্ড এবং যোগ্য উত্তরাধিকারী।


 

নিম্নে মোট ৫৩ জন সপিন্ডগণের তালিকা ক্রমানুসারে দেওয়া হলঃ

১। পুত্র

২। পুত্রের পুত্র

৩। পুত্রের পুত্রের পুত্র

৪। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী।

৫। কন্যা

৬। কন্যার পুত্র

৭। পিতা

৮। মাতা

৯। ভাই, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই।

১০। ভাই এর পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্র

১১। ভাই এর পুত্রের পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্রের পুত্র।

১২। বোনের পুত্র

১৩। পিতার পিতা

১৪। পিতার মাতা

১৫। পিতার ভাই

১৬। পিতার ভাইয়ের পুত্র

১৭। পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র

১৮। পিতার বোনের পুত্র

১৯। পিতার পিতার পিতা

২০। পিতার পিতার মাতা

২১। পিতার পিতার ভাই

২২। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র

২৩।  পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র

২৪। পিতার পিসির পুত্র

২৫। পুত্রের কন্যার পুত্র

২৬। পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র

২৭। ভাইয়ের কন্যার পুত্র

২৮। ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র

২৯। খুড়ার কন্যার পুত্র

৩০। খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র

৩১। পিতার খুড়ার কন্যার পুত্র

৩২। পিতার খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র

৩৩। মাতার পিতা (নানা)

৩৪। মাতার ভাই (মামা)

৩৫। মাতার ভাইয়ের পুত্র (মামার পুত্র)

৩৬। মাতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র (মামার পুত্রের পুত্র)

৩৭। মাতার বোনের পুত্র (মাসির পুত্র)

৩৮। মাতার পিতার পিতা

৩৯। মাতার পিতার ভাই

৪০। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্র

৪১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র

৪২।  মাতার পিতার বোনের পুত্রের পুত্র

৪৩। মাতার পিতার পিতার পিতা

৪৪। মাতার পিতার পিতার ভাই।

৪৫। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র

৪৬। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র

৪৭। মাতার পিতার পিতার বোনের পুত্র

৪৮। মাতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র

৪৯। মাতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র

৫০। মাতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র

৫১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র

৫২।  মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র

৫৩।  মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র


 

মোট ৫৩টি শ্রেণির মধ্যে মহিলা শ্রেণী ৫ টি।

১। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী (তালিকায় যার স্থান ৪র্থ)।

২। কন্যা (তালিকায় যার স্থান ৫ম)।

৩। মাতা (তালিকায় যার স্থান ৮ম)।

৪। পিতার মাতা (তালিকায় যার স্থান ১৪ তম)।

৫। পিতার পিতার মাতা ( তালিকায় যার স্থান ২০ তম)।

এই ৫ শ্রেণীর মহিলা কোন সম্পত্তি পেলেও সীমিত কিছু শর্ত (যেমন- মৃতের শ্রাদ্ধ, মৃতের কৃতঋণ পরিশোধ ইত্যাদি) ছাড়া তা হস্তান্তর করতে পারে না। তারা মুলত জীবনস্বত্ব ভোগ করতে পারে। তাদের মৃতুর পর সম্পত্তি পূর্ব মালিকের কাছে ফিরে যাবে, যা নিকটস্থ উত্তরাধিকারী পাবেন। কোন পুরুষ উত্তরাধিকারী সম্পত্তি না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে সম্পত্তি বারবার মৃত মুল মালিকের কাছে ফিরে যাবে।


 

১ থেকে ৪ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত কেউ জীবিত না থাকলে (৫ নম্বর ক্রমিকের) কন্যা সম্পত্তি পাবে। কন্যাদের মধ্যে কুমারী কন্যার দাবী অগ্রগণ্য, এর পর পুত্রবতী বা পুত্র সম্ভবা কন্যাদের দাবী। কন্যা উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি পেলে তার মৃত্যুতে তার পুত্র সন্তান সম্পত্তি পাবে। তবে কন্যার পুত্র না থাকলে পুত্রের পুত্র কোন সম্পত্তি পাবে না।


 

এক বা একাধিক পুত্র থাকলে তারাই সমুদয় সম্পত্তি পাবে। নিকটবর্তী পুরুষ ওয়ারিশ থাকলে পরবর্তীরা সম্পত্তি পাবে না, যেমন পুত্র থাকলে পুত্রের-পুত্র সম্পত্তি পাবে না।

 


মৃত ব্যক্তির পূত্র ও স্ত্রী থাকলে, স্ত্রী এক পূত্রের সমান অংশ পাবে। একাধিক স্ত্রী থাকলে স্ত্রীর অংশ স্ত্রীদের মধ্যে তুলাংশে বন্টন হবে। স্ত্রী যেরূপ অংশ পাবে, পূত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী বা পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীও অনুরূপ অংশ পাবে।

 


 

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের সময় অংশীদারদের মধ্যে যদি কোন অংশীদার মৃত থাকেন, তবে মৃত ব্যক্তির জীবিত উত্তরাধিকারগণ ওয়ারিশ হবে।

 


স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী জীবনস্বত্ব (Life Interest) ভোগ করেন। তার মৃত্যর পর উক্ত সম্পত্তি পুত্রদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়।


 

কোন হিন্দু-বিধবা মহিলা পুনরায় বিবাহ করলে তাকে তার পূর্বের স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি মৃত স্বামীর জীবিত অন্যান্য ওয়ারিশের নিকট ছেড়ে দিতে হয়।


 

একমাত্র হিন্দু ধর্মে দত্তক পুত্র গ্রহনের বিধান আছে। তাই দত্তক পুত্র স্বাভাবিক পুত্রের (১/৩) তিন ভাগের এক ভাগ পাবে।

 


হিন্দু আইনে সন্ন্যাসী উত্তরাধিকার হয় না। সন্ন্যাসীকে সংসার ত্যাগী হিসাবে মৃত ধরা হয়।


 

অন্ধ, বধির, মূক, অঙ্গহীন, পুরুষত্বহীন এবং হাবাগোবা পুরুষ ও মহিলাগণ হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। এমনকি দূরারোগ্য কুষ্ঠ-ব্যধীগ্রস্ত ব্যক্তিগণও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বৈধ সন্তান, পিতামহ ও পিতামহীর উপর উত্তরাধিকারিত্ব বর্তায়।


 

স্বামী অসতী স্ত্রী রেখে মারা গেলে, সেই অসতী স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি পাবে না। তবে বিধবা স্ত্রী আইন সঙ্গতভাবে সম্পত্তি পাওয়ার পর অসতী হলে প্রাপ্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না। অসতীত্বের কারনে মাতাও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। তবে অসতীত্বের কারনে কোন নারী, স্ত্রী-লোকের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না।


 

কোন হিন্দু লোক ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়।


 

হত্যাকারী এবং তার ওয়ারিশ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে।

coments

সর্ম্পকিত বিষয়বস্তু সমূহ